নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রামের স্বনামধন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কেপিডিএল বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছে আন্তর্জাতিক ইসলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত শিক্ষক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
এই অভিযোগে আসামীদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে কেপিডিএল বিল্ডার্স লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমদ কবির(৩৭)। যার সি. আর মামলা নং- ৩৪৬/২০২১।
মামলার তথ্য সূত্রে জানা যায় যে, গেল ২৮শে জুন রাত ৯টায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মামলার বাদী আহমদ কবির(৩৭) কাজ শেষে রাতে নিজ বাসভবন বায়েজীদ বোস্তামী থানাধীন শাহ আমানত টাওয়ারে গেলে আসামীগণ সংঘবদ্ধভাবে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে লাঠি ও লোহার রড নিয়ে হামলার উদ্দেশ্যে ওঁত পেতে থাকে। বাদী ওনার নিজ বাস ভবন শাহ আমানত টাওয়ারের গেইটে ঢুকতেই অত্র মামলার ৪ নং আসামী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী শিক্ষক আবুল কালাম(৪৩), পিতা- মৃত নিজাম উদ্দিন, ৫ নং আসামী ব্যাংক এশিয়া ইসলামিক উইন্ডো আগ্রাবাদ শাখার কর্মকর্তা আবু আনসার মো: হাবিবুল্লাহ(৪৭), পিতা- মোঃ আজিজুল হক, ৮নং আসামী প্রাইম ব্যাংক, কামাল বাজার শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা মোঃ আল আমিন পিতা- মোঃ শাহজাহান, ৯ নং আসামী নাজমুল হক পিতা- মোজাম্মেল হক, ১০ নং আসামী জফির উদ্দীন এবং ৩নং আসামী ইউ.সি.বি ব্যাংক কর্ণফুলী শাখার ব্যবস্হাপক মোঃ জসীম উদ্দীন আমজাদী, পিতা- মো: আব্দুল হক বাদীকে পরিকল্পতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে রড ও লাঠি দিয়ে বুকে ও মাথায় আঘাত করে। আঘাতের ফলে বাদীর বুকে ও মাথায় গুরুতর জখম হয়।
জানা যায়, সংঘবদ্ধ চক্রের অন্যান্য আসামীগণ ধারালো অস্ত্র হাতে অপরাধ কর্মের সমর্থনে শোর চিৎকার করে ও অপরাধ সংগঠনের এক ভয়াল পরিবেশ তৈরী করে এবং আসামীগণ বাদীকে বারবার খুন করার হুমকি ধমকি দিতে থাকে। হট্টগোল শুনে বাদীর সহোদর ছোট ভাই রেজাউল কবির সুমন(৩৪) এবং বৃদ্ধ পিতা আমির আহমদ(৭৩) বাদীকে হামলাকারীদের কবল থেকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসলে অত্র মামলার ১৪ নং আসামী আফজল হোসেন, পিতা-হাজ্বী মোখলেছুর রহমান, ২নং আসামী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এম. মঞ্জুরুল আলম মজুমদার(৪৪), পিতা- ফয়েজ আহমদ মজুমদার, ১নং আসামী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী শিক্ষক মোঃ নাজিম উদ্দীন(৪৫), পিতা-মোঃ হারুনুর রশিদ, ৬নং আসামী রিয়াজুল হক চৌধুরী, পিতা- নুরুল আমিন চৌধুরী, ৭নং আসামী আলমগীর শিকদার, পিতা- মৃত সোলতান আহমদ ও ১২নং আসামী আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক হাটহাজারী শাখার কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান, পিতা-মোহাম্মদ ইদ্রিস সহ অন্যান্য আসামীগণ বাদীর ছোট ভাই ও বৃদ্ধ পিতাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। যার ফলে বাদীর ছোট ভাই ও বৃদ্ধ পিতার চোখে, মুখে, বুকে ও মাথায় জখম হয়। এমনকি আঘাতের ফলে বাদীর পিতার চোখে জখম হয়ে তিনি দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেন। উল্লেখ্য যে, অভিযুক্ত আসামীগণ সকলেই বায়েজীদ থানাধীন শাহ আমানত টাওয়ারের অস্থায়ী বাসিন্দা বলেও স্থানীয় সূত্রে জান যায়।
থানা সূত্রে জানা যায় যে, গত ২৮শে জুন রাত ৯টায় নিজ বাসভবন বায়েজীদ বোস্তামী থানাধীন শাহ আমানত টাওয়ারের গেইটে তালা লাগিয়ে একদল সন্ত্রাসী ও সংঘবদ্ধ একটি চক্র কেপিডিএল বিল্ডার্স লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর উপর হামলা চালাচ্ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে খরর পেয়ে ঘটনাস্থলে বায়েজীদ থানা পুলিশ উপস্থিত হয়। ঘটনাস্থল থেকে বাদী, ভিক্টিমদ্বয় ও আসামীদের সবাইকে থানায় নিয়ে যায়। হামলাকারী অন্যান্য আসামীগণ হলেন, এবি ব্যাংক কামাল বাজার শাখার কর্মকর্তা মোঃ আকবর হোসেন, পিতা- মোহাম্মদ শফি, ১৩নং আসামী মফিজুর রহমান বাবুল, পিতা-মীর আহমদ, ১৪নং আসামী মুহাম্মদ আফজান হোসেন, পিতা- মোঃ মোখলেছুর রহমান, ১৫নং আসামী মোঃ নাছির উদ্দীন, পিতা- মো: নবীদুর রহমান, ১৬নং আসামী ওয়ান ব্যাংক এর ফটিকছড়ি শাখার এভিপি এ.কে.এম বদরুদ্দোজা, পিতা- খলিলুর রহমান, ১৭নং আসামী সোনালী ব্যাংক, রাঙ্গুনিয়া শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা কুসুম কুমার বড়ুয়া, পিতা-মৃত রেবতী রঞজন বড়ুয়া, ১৮নং আসামী মোহাম্মদ হাশেম, পিতা- মৃত নুরুল হক, ১৯নং আসামী মোছাম্মৎ নুরজাহান বেগম, স্বামী – এস এম কালাম, ২১নং আসামী কফিল উদ্দীন(৪৮), পিতা- অজ্ঞাত এবং ২০নং আসামী পূবালী ব্যাংক, বায়োজীদ খুলগাঁও শাখার সিনিয়র প্রধান কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা(৪০) প্রমুখ।
বাদীর অভিযোগ, উক্ত সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িত আসামীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ধারা সমূহে মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করলে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাৎক্ষনিক মামলা না নিয়ে বাদীকে আসামীদের সাথে সামাজিকভাবে আপোষ-মিমাংসার পরামর্শ দেন। কিন্তু এরপর থেকে আজ অবধি কোন মীমাংসা সম্ভব হয়নি।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কেপিডিএল বিল্ডার্স লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উক্ত মামলার বাদী আহমদ কবির আরো জানান যে, আমি শাহ আমানত টাওয়ারের ডেভেলপার ও একজন ফ্ল্যাট মালিক। গত ২০১৬ সালে উল্লেখিত বিবাদীগণকে বায়েজীদ থানাধীন শাহ আমানত টাওয়ারের চুক্তিপত্র অনুযায়ী ফ্ল্যাট বিক্রি করি এবং নির্ধারিত তারিখের পূর্বে সকল সুযোগসুবিধা সহ ফ্ল্যাটগুলো মালিকদের বুঝিয়ে দিয়। বিবাদীগণ উক্ত ফ্ল্যাটগুলো ভোগদখলে রয়েছে বলেও জানান তিনি। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১লা ফেব্রুয়ারী টাওয়ারে উপরে একটি ইবাদতখানা ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কাজের লোক পাঠালে বিবাদীগণ তাদেরকে কাজে বাঁধা দেয় এবং টাওয়ারের কাজ করতে না দিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। বিবাদীগণের সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রটি ১টি করে ফ্ল্যাট কিনে পুরো ভবনটি দখলের চেষ্টায় বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে আমার ফ্ল্যাটটি সহ ভোগ দখলের পায়তারা এবং আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের উপর বারবার হামলা চালাচ্ছে৷ এ অবস্থায় আমি আমার পরিবার নিয়ে অনিরাপদ ও ভীত-সন্ত্রস্ত জীবনযাপন করছি। নিরাপদ জীবনযাপন করতে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একান্ত সহযোগীতাও চান তিনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম(বিএমএসএফ) এর কেন্দ্রীয় গণযোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক কাইছার ইকবাল চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ীর উপর বারবার হামলার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক অনতিবিলম্বে আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ জরুরী। সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দৃষ্টিকার্ষণ করে তিনি আরো বলেন, ব্যবস্থাগ্রহণে বিলম্ব হলে সংঘবদ্ধ আসামীগণ এর চেয়ে আরো বড় ধরনের মারাত্মক ঘটনা ঘটাতে পারে। সেই সাথে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর উপর সংঘবদ্ধ চক্রের হামলা গুরুতর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সামিল এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জোর দাবীও জানান তিনি।
বিএমএসএফ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার আইন বিষয়ক উপদেষ্টা এডভোকেট ইসহাক আহমেদ প্রতিবেদককে বলেন, মাননীয় বিজ্ঞ আদালত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আদেশকৃত সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ ঘটনার দ্রুত তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা করবেন। তিনি আরো বলেন, সচেতন মহলের দাবী ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ।