চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ মিস্ত্রি পাড়া এলাকায় কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও একাদিক মামলার আসামী দুই সহোদর ভাই কর্তৃক ১জন মহিলা ভাড়াটিয়া, বোন ও ১জন প্রবাসী ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগ উঠেছে।
৮ই মে (শুক্রবার)আগ্রাবাদ এলাকার ডবলমুরিং থানাধীনস্থ ২৪নং ওয়ার্ড়ের মিস্ত্রি পাড়া এলাকায় মৃত আব্দুল হাফিজ কলোনিতে ঘটনাটি ঘটে বলে নির্যাতিত শাহনাজের(৩২) কাছ থেকে জানা যায়।
জানা যায় যে, মৃত আব্দুল হাফিজ মৃত্যুকালে ওনার ৫ ছেলে ও ৪ মেয়ে সহ মোট ১১জন পরিবারের সদস্য রেখে যান। হাফিজ কলোনীর সম্পত্তির পুরো অংশ থেকে অন্যান্য অংশীদারকে বাদ দিয়ে দুই সহোদর ভাই একজুট হয়ে তারা উক্ত সম্পত্তি একাই ভোগ দখল করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তারা হলেন, আব্দুল হাফিজের পুত্র রবিউল হাছান(৩৪) ও রবিউল হোছাইন(৩৪)।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, ঐ দুইসহোদর ভাই এলাকায় এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা করছেনা। তাদের বিরুদ্ধে মাদক, চোরাচালান, ভাংচুর মামলা সহ একাধিক মামলাও রয়েছে বলে জানাগেছে।
বর্তমানে তারা হাফিজ কলোনীর সম্পত্তির মোট ১১জনের অংশ থেকে ৭জনকে বাদ দিয়ে তারা নিজেরাই(২ ভাই ও ১ মা এবং ১বোন মিলে) সম্পত্তির পুরো অংশ ভোগ দখলের নিমিত্তে জায়গার জাল কাগজ তৈরী করছে বলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানাগেছে।
৮মে আব্দুল হাফিজের পুত্র দুবাই প্রবাসী মো: সবুজ ও মোঃ ইকবাল আগ্রাবাদের নিজ বাসায় পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নিতে তাদের দেখতে যায়। খবর পেয়ে কুখ্যাত সন্ত্রাসী রবিউল হাছান(৩৪) ও রবিউল হোছাইন(৩৪) দুই সহোদর ভাই ধারালো অস্ত্রসহ তাদের স্থানীয় ক্যাডার বাহিনীদের সাথে নিয়ে সৎ ভাই সবুজ(৩২) ও ইকবাল(২৭), বড় বোন শাহনাজ(৩৭) এর উপর হামলা করে। ঘটনাস্থলে কলোনীর ভাড়াটিয়া শাহনাজ আক্তার(৩৬) কে গাছের টুকরো দিয়ে মারধর করে এবং গায়ের কাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা বলেও জানাগেছে।
নির্যাতিত শাহানাজ আক্তার(৩৭) বলেন, আমাকে সবসময় আমার সৎ ভাই ও কুখ্যাত সন্ত্রাসী রবিউল হাছান ও রবিউল হোছাইন মারধর করে। গত কয়েকদিন আগে আমার বড় ছেলে হৃদয়(২৪) কেও মারধর করে আমার বাবার কলোনী ছেড়ে যেতে বলে হুমকি দেয়। কলোনী ছেড়ে না গেলে যেকোন সময় জানে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় ঐ দুই সহোদর ভাই যা প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী।
ধারালো অস্ত্র দিয়ে আজকের হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহনাজ বঙ্গনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ৮মে শুক্রবার দুপুর ১টায় হঠাৎ রবিউল হাছান আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো লম্বা নিয়ে আমার রুমের দিকে তেড়ে আসলে আমি দরজা লাগিয়ে দিই। আমাকে হত্যা করতে না পেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমার দরজায় কোপ দেয় এবং আমার টিনের চালে কোপ দেয় যার চিহ্ন এখনো রয়েছে। পরে দরজায় লাতি মেরে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করে। দরজা ভাঙ্গতে না পেরে টিনের উপর পাথর ছু্ঁড়ে মারে।
থানা থেকে এ এস আই রবিউল স্যার আসার পর কিছুক্ষণ ঐ দুই ভাই চুপ থাকলেও পুলিশ চলে যাওয়ার পরপরিই আবারো আমি ও আমার বড় ছেলেকে তারা মারধর করে। তাই আমি পরে কোনরকম তাদের হাত থেকে বেঁচে থানায় গিয়ে জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে স্থানীয় ডবলমুরিং মডেল থানায় সাধারণ ডায়রী করি। যার জিডি নং- ৩১৪। আমি আমার জীবন ও আমার পরিবার নিয়ে ঐ দুই সন্ত্রাসীর ভয়ে আতংকে দিন কাটাচ্ছি বলেও জানান তিনি।
নির্যাতিত ভাই মোঃ সবুজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বঙ্গনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আমি দুবাইতে আছি দীর্ঘ ৬বছর ধরে। গেল শুক্রবার ৮মে আগ্রাবাদের বাসায় সবাইকে দেখতে আসলে আমার দুই সৎ ভাই রবিউল হাছান(৩৪) ও রবিউল হোছাইন(৩৪) সহ অারো কয়েকজন মিলে হঠাৎ আমাকে মারধর করে এবং লম্বা দা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারতে আসে। আমি নিজেকে বাঁচাতে একটি রুমে ঢুকে পড়লে তারা ঐ রুমের দরজা ভাংচুর করে। পরে পুলিশের সহযোগিতায় আমরা উদ্ধার হই।
ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলার বিষয়ে জরুরি প্রশাসনকে অবহিত করতে ৯৯৯-এ যোগাযোগ করা হলে ডবলমুরিং থানার ডিউটি অফিসার এ এস আই রবিউল ঘটনাস্থলে আসেন এবং উভয়পক্ষকে লক ডাউন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন।
এ এস আই রবিউলের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বঙ্গনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঐ দুই সহোদর ভাই কর্তৃক হামলার ঘটনাটি নিশ্চিত। তারা দুই সহোদর ভাই এলাকায় মাদকসহ নানান অপরাধের সাথে জড়িত এবং তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে বলেও জানতে পারি। আজকের হামলার ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো বলেও জানান তিনি।
যেহেতু এখন সারাদেশে লকডাউন চলছে আর বিষয়টি যেহেতু জায়গা সংক্রান্ত তাই বিষয়টি লক ডাউনের পর কলোনীর সকল অংশীদারদের নিয়ে বসে জায়গাটি একেবারেই ভাগাভাগির পরামর্শ দেন তিনি।
হামলার ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বঙ্গনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমি এবিষয়ে এখনো পর্যন্ত অবগত না। কারো কাছ থেকে অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবো।