কাইছার ইকবাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম
দুই নেতার উদ্যোগে চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষার কিট সংকটের সমাধান হয়েছে। ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস-বিআইটিআইডি’তে কিটের উপকরণ সংকট দেখা দেয়। এতে কোভিড-১৯ পরীক্ষা বন্ধের উপক্রম হয়।
বিআইটিআইডিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে ৯৫০ কিট এলেও তা দিয়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করা যাচ্ছিল না।
আনুষঙ্গিক উপাদান সংকটের ফলে এসব কিট দিয়ে সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষা সম্ভব নয় বলে জানান দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
এ বিষয়ে বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, যেসব কিট পেয়েছি সেগুলো অসম্পূর্ণ ছিল। ওগুলো দিয়ে কাজ করা যাচ্ছিল না। কিন্তু আমাদের এখানে ল্যাবরেটরিতে কিছু উপাদান থাকায় সেগুলোকে ব্যবহার করে আমরা কাজ চালাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন খুশির সংবাদ হলো উপমন্ত্রী মহোদয়ের গাড়িতে করেই কিট আসছে। রাতেই এসে পৌঁছাবে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে আমাদের নিজস্ব ল্যাবরেটরির উপাদান দিয়ে বুধবার পরীক্ষা চালিয়েছি। বড়জোর শুক্রবার পর্যন্ত চালাতে পারতাম। কিন্তু এরপর নতুন কারও করোনার পরীক্ষা করা যেত না।
অবশেষে কিট আসছে এই সংবাদটি পেলাম। এতে করে সংকট কেটে গেল।
তিন দিন যাবৎ চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ও সিভিল সার্জন কিট আসবে বলে জানালেও তা ঢাকা থেকে কখন আসবে জানাতে পারেননি। তাদের পারস্পরিক তথ্যও ছিল অস্পষ্ট। তারা কেউ জানিয়েছিল, কিট সংকট নেই। আবার কেউ বলেছে, পরীক্ষা বন্ধ হবে না। যথেষ্ট কিট আছে। আবার অনেক কর্মকর্তা জানান, উপাদানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিট সংকটের বিষয়টি উঠে আসলেও চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিদিনই গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছে ‘কিট পথেই ,চলে আসবে’। সুনির্দিষ্ট করে তারা কেউ কোনো উত্তর দিতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলেও স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কিট এসে কখন পৌঁছাবে তা সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি। যা নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ছিল চরমে।
তবে কিট আসার তথ্য নিশ্চিত করে কোভিড-১৯ বিষয়ক স্বাচিপের বিভাগীয় কমিটির সমন্বয়ক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান বঙ্গনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের গাড়িতে করে এক হাজার নয় শ ২০ কিট আসছে। ঢাকা থেকে গাড়ি রওনা হয়েছে এসব কিট রাতেই চট্টগ্রামের বিআইটিআইডিতে এসে পৌঁছাবে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষা উপমন্ত্রীর গাড়িতে করে ওনার গানম্যান ও একজন সহকারী এসব কিট নিয়ে রওনা দিয়েছেন। কিট নিয়ে সৃষ্ট চট্টগ্রামবাসীর শঙ্কা কেটে গেছে। চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় কিটের ‘শঙ্কার কালো মেঘ কেটে গেছে’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বিআইটিআইডিতে আরএমএ কিটের অপ্রতুলতার কারণে পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তা দূর করেছেন চট্টগ্রামের সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন এমন সংকট সমাধানে। এ ছাড়া বুধবার বিকেলে এ বিষয়ে চট্টগ্রামের আরেকজন নেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালককে কিট সংকটের বিষয়টি জানান। কিট সংকট নিয়ে চট্টগ্রামের নেতাদের এমন উদ্যোগে খুশি বন্দরনগরীর বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আরিফুর রহমান আরিফ বঙ্গনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, চট্টগ্রামে অনেক নেতা রয়েছে কিন্তু জনগণের জন্য ভাবে কয়জন। আমরা খুবই ভীত ছিলাম কিট না আসলে কী হবে। অবশেষে সমাধান হলো। এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন ছিল এমন উদ্যোগের। কৃতজ্ঞতা চট্টগ্রামের দুই নেতাকে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক বিষয়ক সম্পাদিকা এডভোকেট কামরুন নাহার বঙ্গনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, এটা সত্যি যে স্বাস্থ্যখাতে চরম অব্যবস্থাপনা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বেশি। নেতারা চাইলে যে সব সম্ভব তার প্রমাণ এই যে কিট যে আসছে এটাই।