বঙ্গনিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক:
নবম শ্রেণির তাসফিয়া ও তার বন্ধু আদনান দুজনই দুটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বুধবার সকালে পতেঙ্গা ১৮ নম্বর ঘাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিনের মৃত্যুরহস্য নিয়ে গোলকধাঁধায় পড়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর গোলপাহাড় এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে একটি অটোরিকশায় উঠেছিল তাসফিয়া। এরপর গোলপাহাড় থেকে তাসফিয়া কিভাবে পতেঙ্গা পৌঁছে গেল সেই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছে পুলিশ। সেই সঙ্গে যে অটোরিকশায় চড়ে তাসফিয়া পতেঙ্গা গেছে সেই অটোরিকশার সন্ধান করছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তদন্তের দ্বিতীয় দিনে পুলিশ বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোলপাহাড়ের রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে অটোরিকশায় ওঠার ভিডিও দৃশ্য পুলিশের হাতে আছে। রাতে তাসফিয়াকে একা সৈকতে বসে থাকতে এবং হাঁটতে দেখেছে এমন প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধানও পেয়েছে পুলিশ। ওই অটোরিকশা ও তাসফিয়ার মোবাইল ফোনের সন্ধান করছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাসফিয়ার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয় এবং পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। বিকেলে মরদেহ নিয়ে টেকনাফে দাফন করেন তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন।
বন্ধু আদনান মির্জাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন তাসফিয়ার ব্যবসায়ী বাবা মোহাম্মদ আমিন। এই মামলায় আদনানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল বিকেলেই চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে সোপর্দ করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন আদালতে জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম।
আদনানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসামি আদনানকে মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে সোপর্দ করা হয়। একই আদালতে রিমান্ড আবেদনও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু আসামি শিশু হওয়ার কারণে মহানগর হাকিম আদালত রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি করেননি। আগামী রবিবার শিশু আদালতে রিমান্ড শুনানি হবে। এ ছাড়া আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।’
তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাসফিয়ার সঙ্গে আদনানের পরিচয় হয়। বিষয়টি জেনে কিছু দিন আগে আদনানকে বাসায় ডেকে সতর্ক করা হয়েছিল। এই কারণে আদনান তাসফিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে সহযোগী অন্য আসামিদের সহযোগিতায় পতেঙ্গা নিয়ে হত্যা করেছে। মামলার আসামিরা সবাই শিশু।
মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (বন্দর) আরেফিন জুয়েল ও সহকারী কমিশনার (কর্ণফুলী) মো. জাহেদুল ইসলাম জানান, আদনান মির্জাকে আটকের পর বুধবার রাতেই তার বাসায় গিয়ে পুলিশ আদনানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ কিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্র জব্দ করেছে। গতকাল অন্য আসামিদের তথ্য সংগ্রহ ও তাদের আটকের জন্য অভিযান চালানো হয়। এ ছাড়া তাসফিয়ার বান্ধবীদের বাসায় গিয়ে পুলিশ তাসফিয়া সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাসফিয়াকে ধর্ষণ করা হয়েছে এমন কোনো আলামত সুরতহাল রিপোর্টে পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এ বিষয় এবং তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।