নিউজ ডেস্ক, বঙ্গনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম.
ইউরোপের নামকরা অনেক সাংবাদিকও বর্তমান বার্সেলোনা দলটাকে বলেছেন, শেষ দশ বছরের সবচেকে বাজে দল। আবার অনেক ফুটবল পাণ্ডিতরা বলেছেন, এই শতাব্দির সবচেয়ে বাজে বার্সেলোনা দল। নিন্দুকেরা যত যাই বলুক। এই বাজে তকমা লাগানো দলটাই এখন ইতিহাসের সাক্ষী। এক বছর স্পেনের শীর্ষ লিগ লা লিগায় একটি ম্যাচেও হারের মুখ দেখেনি তারা। অথচ মৌসুমের শুরুতে কট্টর সমর্থক ছাড়া এই বার্সেলোনা দলটার পক্ষে বাজি ধরার লোক ছিল খুবই নগণ্য।
২০১৭ সালের ৮ই এপ্রিল মালাগার স্টেডিয়াম লা রোজালেদায় ২-১ গোলের হার। লিগে বার্সেলোনার বিপক্ষ খেলা দলগুলোর সেটাই শেষ সাফল্য। ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল যখন লেগানেসকে ৩-১ গোলে হারায় তখন বার্সেলোনা লা লিগায় ৩৮ ম্যাচ অপরাজিত। মাঝে কেটে গেল একটি বছর। অথচ এই দলটাকেই কেউ হারাতে পারলো না! বার্সা কী আসলেই অসাধারণ ছিল? নাকি ভাগ্যের সহায়তাও ছিল? তাহলে তো, একটু মৌসুমের শুরুর দিকে ফিরে তাকাতেই হচ্ছে।
মেসি পরবর্তী বার্সেলোনাকে যে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যাকে ঘিরে বার্সেলোনার সমর্থকরা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতো সেই নেইমারকে মৌসুমের শুরুতে ২২২ মিলিয়ন ইউরোয় পিএসজির কাছে বিক্রি করে দিয়ে বেশ বিপদেই পড়ে কাতালোনিয়ার ক্লাবটি। এছাড়া মৌসুম শেষে কোচের দায়িত্বও ছাড়েন লুইস এনরিকে।
এমন এক টালমাটাল অবস্থায় দলের দায়িত্ব নেন অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের সাবেক কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে। তেমন নাম ঢাক না থাকলেও সামান্য একটি দলকে যে অসাধারণ বানানো যায়, সেটার নজির স্থাপন করলেন তিনি।
নেইমারকে হারিয়ে ট্রান্সফার মার্কেটে ধুঁকতে থাকা বার্সেলোনাকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন ডেম্বেলে। কৌতিনহোকে কেনার জোর প্রচেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত লিভারপুল তাকে মৌসুমের শুরুতে ছাড়েনি। তার উপর আরদা তুরানও বার্সা ছেড়ে চলে গেলে চতুর্দিক থেকে ভঙ্গুর এক দলে পরিণত হয় বার্সা। এমন এক দলকে পরপর দুই ম্যাচে হারিয়েই স্প্যানিশ সুপার কোপা জিতে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। ব্যবধানটা তখনই বোঝা হয়ে গিয়েছিল দু’দলের।
পওলিনহো, ডেম্বেলেকে দলে টেনে দেউলেফেউর মত উদীয়মান ফুটবলারদের নিয়ে লিগ শুরু করেন ভালভার্দে; কিন্তু কয়েক ম্যাচ পরই ইনজুরিতে পড়েন ডেম্বেলে। ৩ মাসের জন্য মাঠের বাইরে তিনি। ভালভার্দের কপালে আরো একবার অশনি সংকেতের ঘনঘটা।
সেই বার্সেলোনাকে একাই টেনে তোলার দায়িত্ব নিলেন দলের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। সঙ্গী হিসেবে পেলেন সতীর্থ লুইস সুয়ারেজকে। ৩১ ম্যাচ শেষে লিগে মেসির গোল সংখ্যা ২৯ এবং সুয়ারেজের ২২। অনেকগুলো ম্যাচেই বার্সেলোনার গোল এসেছে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের আত্মঘাতি গোলে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ভাগ্যের কথাও বলতে হচ্ছে।
লিগে বার্সেলোনার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ছিল বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে; কিন্তু সবাইকে অবাক করে ভঙ্গুর এই বার্সেলোনা দলটাই ৩-০ গোলের অসাধারণ এক জয় ছিনিয়ে আনে বার্নাব্যু থেকে। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এই রিয়াল মাদ্রিদই টানা দুই ম্যাচে বার্সাকে হারিয়েছিল।
এবারের মৌসুমে লিগের ৩১টি ম্যাচ খেলা হয়েছে। যেখানে মেসিদের জয় ২৪টিতে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, ভ্যালেন্সিয়া, সেল্টা ভিগো, এস্পানিওল, গেটাফে, লাস পালমাস এবং সেভিয়া- এই সাতটি দলের বিপক্ষে বার্সা ড্রয়ের মুখ দেখে। লিগ ছাড়াও বার্সা যেন অপ্রতিরোধ্য অন্যান্য প্রতিযোগিতায়ও। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও এখন পর্যন্ত হারের মুখ দেখেনি ভালভার্দের দল। তাছাড়া মৌসুমের একমাত্র হারটি এসেছে কোপা দেল রেতে এস্পানিওলের মাঠে।
আন্দ্রে গোমেস, ভিদাল, রাকিতিচ, পওলিনহোদের বাজে বার্সেলোনা দলটাই এখন ইতিহাস তৈরি থেকে মাত্র এক ধাপ পেছনে। লা লিগায় ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ১৪ এপ্রিল হার এড়াতে পারলেই নতুন ইতিহাস গড়বে ভালভার্দের দল। টানা ৩৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকা একমাত্র দল হবে বার্সা। প্রশ্ন আসতেই পারে বার্সেলোনা যদি অপরাজিত থাকা অবস্থায় লিগ জিতে নেয় তাহলে তারাই কী একমাত্র দল হিসেবে লিগে এমন কীর্তি গড়বে?
না! বার্সেলোনা ছাড়াও লা লিগায় আরো দুই দল অপরাজিত থেকে লিগ জিতেছে। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে অ্যাথলেটিক বিলবাও এবং ১৯৩১-৩২ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ অপরাজিত থেকে লিগ জিতেছিল। যদিও তখন লিগে দল ছিল মাত্র ১০টি। ২০ দলের লা লিগায় এখন পর্যন্ত কোন দলই অপরাজিত থেকে লিগ জিততে পারেনি। বার্সেলোনা যদি অপরাজিত লিগ জিততে পারে তাহলে তারাই হবে প্রথম দল, যারা ২০ দলের লা লিগাতে অপরাজিত থেকে লিগ জিততে যাচ্ছে।