নিউজ ডেস্ক, বঙ্গনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম.
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশকে (৪৮) প্রকাশ্যে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গুলি করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। লতিফুর রহমান পলাশ উপজেলার কুমড়ি গ্রামের মৃত গোলাম রসুল শেখের ছেলে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, লতিফুর রহমান পলাশ দিঘলিয়ার নিজ বাড়ি থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি সভায় অংশ নিতে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপস্থিত হন। সভা শুরুর আগে অন্য চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নাস্তা খাওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে পলাশ ব্যক্তিগত কাজে ইউপি মেম্বার ফরিদ আহম্মেদ বুলুকে সঙ্গে নিয়ে লক্ষীপাশা সোনালী ব্যাংকের উদ্দেশে মোটরসাইকেলে রওনা দেন। এ সময় উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের পূর্ব পাশে পৌঁছালে আগে থেকে ওতপেতে থাকা ৪-৫ দুর্বৃত্ত প্রথমে তার মাথায় গুলি করে রাস্তার ওপর ফেলে দেয় এবং পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ সময় মেম্বার ফরিদ আহম্মেদ বুলুর চিৎকারে উপজেলায় আগত বিভিন্ন ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। মুুমূর্ষু অবস্থায় পলাশকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেবাশীষ বিশ্বাস তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ইউপি চেয়ারম্যনের মৃত্যুর খবর এবং তাকে এক নজর দেখতে হাসপাতাল চত্বরে তার স্বজনসহ হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেবাশীষ বিশ্বাস জানান, চেয়ারম্যান পলাশের শরীর থেকে দুটি গুলি বের করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
চেয়ারম্যানের পলাশের মোটরসাইকেলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি মেম্বার ফরিদ আহম্মেদ বুলু বলেন, ঘটনাস্থল উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের পূর্ব পাশে আমরা পৌঁছালে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই দুর্বৃত্ত সামনে থেকে চেয়ারম্যানকে গুলি করে। চেয়ারম্যান মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেলে আমি প্রাণভয়ে চিৎকার করে দৌড়ে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের দিকে চলে আসি।
লতিফুর রহমান পলাশ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। নড়াইলের পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম, র্যাব-৬, সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চেয়ারম্যানের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, স্যান্ডেল, ছুরির বাঁট ও এক রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। লোহাগড়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্র লক্ষ্মীপাশাসহ আশপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
দিঘলিয়া ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
দিঘলিয়া ইউপির কুমড়ি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুটি পক্ষ সক্রিয় রয়েছে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছিল।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুুল হান্নান রুনু সিকদার বিক্ষোভ শেষে বলেন, দিন-দুপুরে খোদ উপজেলা চত্বরে একজন জনপ্রতিনিধিকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় আমরা বিস্মিত। আমরা হতবাক। আমরা চাই, দু’দিনের মধ্যে অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হোক। তা না হলে উপজেলা আওয়ামী লীগ হত্যাকারীদের আটকের দাবিতে নিয়মতান্ত্রিক আনন্দোলন গড়ে তুলবে।
চেয়ারম্যান পলাশের বড় ভাই নড়াইল জেলা পরিষদের সদস্য সাইফুর রহমান হিলু কোনো মন্তব্য করেননি। তার ছোট ভাই মুক্ত রহমান বলেন, এর আগেও আমার ভাইকে হত্যার জন্য কয়েক দফা হামলা করা হয়। তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ রয়েছে। তিনি ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন।
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে লতিফুর রহমান পলাশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। পলাশের স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।